শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা

Sahab Uddin:
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় চলছে কক্সবাজার জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এমনকি গত ৪ বছর ধরে খালী রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ খালী রয়েছে অর্ধেকের চেয়েও বেশি। এছাড়াও টিউবওয়েল, টয়লেট, হলরুম, ল্যাবটরিসহ প্রয়োজনীয় শ্রেণী কক্ষ না থাকায় এক ধরনের অচলাবস্থার মুখোমুখি হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত ১০ বছরে ১জন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিয়মিত ক্লাস হয় না। ৮ ঘন্টা ক্লাস চলার নিয়ম থাকলেও ৫/৬ ঘন্টা চলে। প্রয়োজনীয় শ্রেণী কক্ষ সহ টুল-টেবিল না থাকায় এক বেঞ্চেই ৫/৭ জনকে বসতে হয়। প্রয়োজনীয় টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। ৩টি টয়লেটের মধ্যে ২টিই শিক্ষকদের দখলে। ওই ২টির মধ্যে শুধুমাত্র ছাত্রীদের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাকি একটি টয়লেট থাকে ছাত্রদের জন্য। তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। টিউবয়েল না থাকায় প্রয়োজনীয় খাবারের পানি দোকান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। কম্পিউটার ও লাইব্রেরীর ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক নেই। যারা আছে তাদেরও বয়স হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সাল থেকে কক্সবাজার পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম  চলে আসছে। তখন ছাত্রদের পড়ালেখার সুযোগ থাকলেও ছাত্রীদের সুযোগ ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপের মুখে ২০০৭ সালে ছাত্রীদের ভর্তির কার্যক্রম চালু করেন। ২০০৭ সাল থেকে ছাত্রীদের ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও বাড়েনি শিক্ষকের সংখ্যা। তাদের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি কোন শিক্ষক। ভর্তি হলেও স্কুলের সব বিষয়ে পাঠ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। বাড়ানো হয়নি ক্লাস শাখাও। বরং কমানো হয়েছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা বলেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে বিগত ১০ বছর ধরে কোন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ১৭ জন শিক্ষক থাকলেও তৎমধ্যে রয়েছে ১ জন অতিথি শিক্ষক। ক্লাস নিতে হচ্ছে স্কুলের হিসাবরক্ষককেও। দীর্ঘ ৮/৯ মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন শিক্ষিকা মিসেস সীমা চৌধুরী। মাঝে মধ্যে কয়েকজন ছুটিতে থাকেন। ৪ জন ইংরেজি শিক্ষক দিয়ে চলছে ইংরেজি ক্লাস। ৩ জন হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক রয়েছে। শূণ্য পদ রয়েছে সাধারণ বিজ্ঞান, ইংরেজি, কৃষি শিক্ষা, রসায়ন বিজ্ঞান ও সঙ্গীত বিষয়।
পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরো জানান, ২০০৭ সাল থেকে ছাত্রীদের ভর্তি করা হলেও পৌরসভা তাদের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। ১০ বছরেও কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে যারা আছে তাদের নিয়ে কোন রকম শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে দ্রুত পৌরসভাকে তা জানানো হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে তিনি কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ের ১২ ও ১৩ নং কক্ষ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার চাল রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশের দৃষ্টি আর্কষন করা হলে তিনি পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরাজমান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে বেশ কয়েকবার শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। আজ রবিবার এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া আগের দুটি সভায় স্কুল সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন