রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

সৈকতের ঝাউবাগান ধ্বংস করে জেলা পরিষদের টয়লেট

Sahab Uddin
হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী-ইন পয়েন্টে ঝাউগাছ কেটে আরো একটি টয়লেট কাম চেঞ্জিং রুম স্থাপন করা হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতের একই পয়েন্টে জেলা পরিষদের একটি টয়লেট কাম চেঞ্জিং রুম কয়েকবছর আগে নির্মাণ করা হলেও মাত্র ১শ ফুটের ব্যবধানে প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো একটি চেঞ্জিং রুম স্থাপন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেসরকারী স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ করা হলেও সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এভাবে একের পর এক স্থাপনা গড়ে তোলায় বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সুবিধার জন্য লাবণী পয়েন্টে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি, জেলা পরিষদের একটি এবং কক্সবাজার পৌরসভার আরেকটি চেঞ্জিং রুম কাম টয়লেট রয়েছে। আর সী-ইন পয়েন্টে রয়েছে জেলা পরিষদের একটি। বর্তমানে এসব চেঞ্জিং রুম পর্যটকদের জন্য যথেষ্ট হলেও সৈকতের ঝাউবাগান নষ্ট করে নতুন করে আরো একটি টয়লেট কাম চেঞ্জিং রুম গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টয়লেট কাম চেঞ্জিং রুম গড়ে তোলার জন্য গোপনে ২২ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরই কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার সৈকতের ঝাউগাছ কেটে সেখানে শ্রমিক শেড স্থাপন করে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ইট, বালি ও সিমেন্টসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী জড়ো করেছে। কিন্তু এই ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠেছে।
কক্সবাজার পর্যটন উন্নয়ন সাংবাদিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ সী-ইন পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে নতুন করে টয়লেট নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, রক্ষকরাই এখন ভক্ষক হয়ে সমুদ্র সৈকত দখলের পাশাপাশি পরিবেশ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। এতে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব বলে মনে করেন তিনি।
একই প্রশ্ন তুলেন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। এই এলাকায় কোন স্থাপনা গড়ে তোলা পরিবেশ আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনারও লংঘন।
তিনি জানান, গত ৭ জুন হাইকোর্ট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় বৈধ-অবৈধ কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। হিউম্যান রাইটস পিচ ফর বাংলাদেশ নামের একটি পরিবেশবাদী সংঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই রায় দেন। কিন্তু প্রচলিত আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা লংঘন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গায়ের জোরে একের পর এক স্থাপনা গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করে সমুদ্র সৈকতে একের পর এক ‘পায়খানার দোকান’ নির্মাণ করা হলে পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কক্সবাজার সী-ইন হোটেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আবছারও ওই টয়লেট কাম চেঞ্জিং রুম স্থাপনের বিরোধিতা করে বলেন, যেখানে টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে, তা একটি নির্মাণাধীন ৫ তারকা বিশিষ্ট হোটেলের একেবারে সামনে। এছাড়া টয়লেট নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটি সী-ইন হোটেলের খতিয়ানভূক্ত জমি। সাগরের ভাঙনের কারণে ওই স্থানটি রাস্তার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন বেআইনীভাবে সেখানেই ‘পায়খানা’ নির্মাণ করে পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে জানার জন্য কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে (নং ০১৭১১২০২৫৮৪) বারবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি বলে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি জানান,কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। এই এলাকার জন্য আলাদা আইন ছাড়াও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এই এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মাণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন