শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

দেশি-বিদেশী সার্ফারদের ঢেউ জয়

Sahab Uddin
সময় তখন সকাল ৯টা। অকাল বর্ষণের কারণে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সন্ধ্যাকালীন আবহ এনে দেয়। সামুদ্রিক নিয়মে তখন পড়েছে জোয়ারের টান। বৈরী আবহাওয়া আর জোয়ারের টানে তীরে আছড়ে পড়ছে উত্তাল ঢেউ। নানান ভঙ্গিমায় শারীরিক কসরত করে এসব ঢেউ জয় করছে একদল তরুণ। তাদের মাঝে রয়েছে একজন কিশোরী। অনবরত ঢেউয়ের নাচনে খেয় হারিয়ে পানিতে মিলিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। অল্পক্ষণ পরে আবারো ঢেউ জয়ে সার্ফিং বোটে দাঁড়াচ্ছে তারা। ঢেউকে জয় করে চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ হয়ে দেখিয়েছে তারা নিজেদের যোগ্যতা। এমনই এক সাফিং প্রতিযোগিতায় শরীরিক কসরত মনভরে উপভোগ করেছেন কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয় বিনোদনপ্রেমীরা। বলা হচ্ছিল টাইগার ট্যুর লিমিটেড এর ‘দি ইন্টারন্যাশনাল সাফিং চেইঞ্জ কক্সবাজার’ প্রতিযোগিতার কথা।
গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কলাতলী সী ক্রাউন পয়েন্টে আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতার। টাইগার ট্যুর লিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় কক্সবাজার লাইফ সেভিং এন্ড সাফিং ক্লাব (সাফিং টাইগার)’র আয়োজিত প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার (এসপি) সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর,টাইগার ট্যুর লিমিটেড’র উপদেষ্টা টীম স্টীল।
সাফিং টাইগারের শাহাদত, রাশেদ, সিফাত, জুয়েল, কামরুল, ফাহাদ, রমজান, শুক্কুর, আব্দুল্লাহ, সিরু, জোহার, জুনায়েদ, নয়ন, নাসির, আজিজ, কামাল ও নারী সার্ফার নাসিমা এবং বিদেশী ব্রেড, রবার্ড, জ্যাক ও কওবিদের নিয়ে সকাল ৯টায় শুরু হয় প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা। ৫জনের গ্রুপ করে চারভাগে সমুদ্রের ঢেউ জয়ে পাঠানো হয় সার্ফারদের। নিজস্ব পারফরমেন্সে প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে প্রতিযোগিতা করেন কামাল, নাসির, আজিজ, ফরহাদ, রাশেদ ও বিদেশী ব্রেড। এদের সবাইকে পিছনে ফেলে গতকালের প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সাফিং টাইগারের তরুণ কামাল উদ্দিন। তাকে দেয়া হয়েছে ক্রেস্ট ও নগদ ৫ হাজার টাকা। প্রথম রানার্সআপ নাসির ও ২য় রানার্সআপ আজিজ ক্রেস্টের পাশাপাশি পেয়েছেন ৩ ও ২ হাজার টাকা করে। এছাড়াও খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে সান্তনা ক্রেস্ট। পুরো প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ইন্টারন্যাশনাল সাফিং ক্লাব সাফিং দ্যা ন্যাশনের ৪ সদস্য ক্রিস্টেন ফ্লাইনার (ক্যালিফুর্নিয়া), ব্যালেন (চিলি), এম্যালী (লজ এঞ্জেল) ও এনডি (সুইডেন)। তাদের সহযোগিতা করেছেন ওয়েটনি ও বেনেসা।
এক প্রতিক্রিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া কামাল বলেন, সাফিং বিশ্বে ক্রমাগত জনপ্রিয় খেলায় রূপ নিচ্ছে। নিয়মিত অনুশীলনকারী বিদেশী সার্ফারদের পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যি গৌরবের। বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম যেমন দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে, আমরাও কক্সবাজার বীচ থেকে যাত্রা করে সাফিংয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।
প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ স্থান অর্জনকারী আমেরিকান সার্ফার ব্রেড ডেনিলস বলেন, আমেরিকাসহ আমার দেখা অন্যান্য দেশের চেয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সাফিং অনেকটা নিরাপদ মনে হয়েছে। সরকারি কিংবা কোন ক্লাবের উদ্যোগ ছাড়া সাগর পাড়ের অখ্যাত তরুণ-তরুণীদের সাফিংয়ে এ অগ্রগতি অবশ্য আনন্দ দেয়। তারা পৃষ্টপোষকতা পেলে একদিন বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
প্রতিযোগিতায় তৃতীয় রাউন্ডে ঝরে যাওয়া নারী সার্ফার নাসিমা আক্তার বলেছেন, একজন নারী হয়ে ২০ জন প্রতিযোগির সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
সাফিং টাইগারের তত্ত্বাবধায়ক শাহাদত হোসেন জানিয়েছেন, এর আগেও কয়েকটা প্রতিযোগিতা হয়েছে। এবারই বিদেশীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। প্রতিনিয়ত সাগরের ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে জীবিকা নির্বাহ করা এসব তরুণরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেখে খুবই গর্ববোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, এটি উন্নত দেশের খেলা বিধায় এখানে সার্ফিং সরঞ্জাম উৎপাদন হয় না। তাই বিদেশী সার্ফারদের অনুদানের সার্ফিং বোট ও অন্যান্য সরঞ্জাম ছাড়া আমরা প্রয়োজনীয় কোন পন্য দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারি না। সরকারি কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে কোন সহায়তা পেলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারবো।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী বলেছেন, প্রশিক্ষনহীন লোকাল সার্ফাররা যে কসরত দেখিয়েছি তা মুগ্ধ হওয়ার মতো। নতুন খেলা হলেও সার্ফিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি নিয়মিত করা গেলে বিদেশী সৌখিন সার্ফারদের কক্সবাজার সৈকতমুখী করা যাবে। পর্যটনের স্বার্থে এ খেলার পৃষ্টপোষকতা করবে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর বলেছেন, আজকের আয়োজনটি ছোট তবে এটির আউটপুট বৃহৎ হবে। সার্ফিং এর জন্য কক্সবাজার বীচ নিরাপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলে আন্তর্জাতিক সার্ফিং প্রতিযোগিতা এখানে অনুষ্টিত হবে এ প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আয়োজন সফল করতে পুলিশ প্রশাসন আন্তরিক সহযোগিতা দিবে।
প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা টাইগার ট্যুর লিমিটেড’র হেড অব কমিউনিকেশন সৈয়দ ফজলে নিয়াজ বলেছেন, ভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশীরা যে অর্থ ব্যয় করে সে পরিমাপ অর্থ পর্যটন খাতে বিদেশী আগমনে আসছে না। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে সার্ফিং এর জন্য নিরাপদ হিসেবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা গেলে বিদেশী পর্যটক আগমন বাড়ানো যাবে। এ লক্ষ্য নিয়ে টাইগার ট্যুর সার্ফিং এর অনাডম্বর এ আয়োজন করেছে। আগামীতে আরো বড় আয়োজন করে পর্যটক আকৃষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন