Sahab Uddin:
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবন ও গ্যালারীতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে কক্সবাজার স্টেডিয়ামের যাবতীয় কার্যক্রম। এছাড়া গত দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত পুরাতন জেলা কারাগার ভেঙ্গে তাতে আউটার স্টেডিয়াম নির্মানের কথা থাকলেও সেটিও ফাইল বন্দী হয়ে আছে। ফলে কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গনের ক্রীড়ামোদী লোকজন হতাশ হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াঙ্গনের দেশি-বিদেশী অনেক আসরই বসছে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে। গেল ডিসেম্বরে পর্যটন শহর কক্সবাজার স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাউথ এশিয়ান প্রমীলা ফুটবল টূর্নামেন্ট। এই টূর্নামেন্ট বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো। ওই টূর্নামেন্টের সফল সমাপ্তির পরই মূলতঃ দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনের রথি-মহারথিদের চোখ পড়ে কক্সবাজারের উপর। দেশি-বিদেশী টূর্নামেন্টের বিভিন্ন ম্যাচ খেলার জন্য কক্সবাজারকেই ভেন্যু হিসেবে নেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এর অংশ হিসেবে গত মার্চ-এপ্রিলে কক্সবাজার স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ লীগের খেলা। নভেম্বরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ লীগের দ্বিতীয় স্তরের খেলা। ওই খেলায় বাংলাদেশের ৫ টি ভেন্যুর মধ্যে কক্সবাজারকে বেছে নেয়া হয়েছে। অপর ভেন্যু গুলো হলো ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, সিলেট ও চট্রগ্রাম। এছাড়া ওই লীগের ৮ টি টীমের মধ্যে প্রথম বারের মতো খেলার সুযোগ পেয়েছে ’কক্স সিটি এফ-সি’ নামের কক্সবাজারের টীম। ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে আর্ন্তজাতিক উশু চ্যাম্পিয়ন শীপ। ওই প্রতিযোগিতায় ৩২ টি দেশ অংশ নিবে। কক্সবাজারের ক্রীড়ামোদীদের মতে, পর্যটন শহর কক্সবাজার ক্রীড়ার ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে। দেশে-বিদেশেও এর ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। কিন্তু আর্শ্চয্যজনক হলেও সত্য যে, যেখানেই ক্রীড়ার দেশি-বিদেশী আসর বসছে সেই স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়ন ও গ্যালারী পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে ২০০৫ সালেই। ১৯৫৭ সালে এটি নির্মাণের পর থেকেই এ স্টেডিয়ামের কোন সংস্কার ও উন্নয়ন নেই। ফলে রীতিমতো আতংকে রয়েছে কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে জড়িত লোকজন ও দর্শকরা। এছাড়া স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে পরিত্যক্ত পুরাতন জেলা কারাগার ভেঙ্গে তাতে আউটার স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়টি ফাইল বন্ধী হয়ে আছে। এটি ভাঙ্গার জন্য গনর্পূত বিভাগ দরপত্র আহবান করলেও অজ্ঞাত কারনে সেটিও বন্ধ আছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকারই কক্সবাজার স্টেডিয়ামের প্রতি সুনজর দেয়নি। শুধুমাত্র ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে তিন টি গ্যালারী নির্মাণ করা হয়েছিল। ফলে আরো ৩ টি গ্যালারী ও স্টেডিয়ামের মূল ভবন ২০০৫ সালেই পরিত্যক্ত ঘোষনা করেছে গণর্পূত বিভাগ। এর পরও কোন প্রকারে চুনকাম করে সেই পরিত্যক্ত ভবনেই কক্সবাজারে খেলাধুলা চলছে। চলছে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক টূর্নামেন্টও। এ অবস্থায় স্টেডিয়ামের অফিসে কাজ করতে গিয়ে রীতিমতো আতংকে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গত রবিবারের ভূমিকম্পের সময়ও তারা আতংকে ছিলেন। যদিওবা কক্সবাজারে ভূকম্পন কম অনুভূত হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গনে সরকারের তেমন কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রিকেট বোর্ড বছরে মাত্র ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। অথচ গত এক বছরেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকা। এ অবস্থায় স্থানীয়, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক টূর্ণামেন্ট আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন- সরকার, কক্সবাজার পৌরসভা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, বিত্তবান লোকজন, স্থানীয় সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে না আসলে সম্ভাবনাময়ী এ ক্রীড়াঙ্গনকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কক্সবাজার জেলা ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম বলেন, আশার বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের মাঠে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের টূর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯২ সালের আগ পর্যন্ত জেলায় খেলাধুলার তেমন কোন ধারাবাহিকতা না থাকলেও এখন নিয়মিত খেলাধুলা হচেছ। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে শুরু হবে মাস ব্যাপী আবাসিক ফুটবল ট্রেনিং ক্যাম্প, অক্টোবরে উপজেলা ফুটবল টূর্নামেন্ট, নভেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ লীগের ২য় স্তরের খেলা ও জেলা ফুটবল লীগ, ডিসেম্বরে এ্যাথলেটিক ক্যাম্প, ১৭ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক উশু চ্যাম্পিয়নশীপ, জানুয়ারীতে হ্যান্ডবল ও হকি সহ নানা ধরনের খেলার টূর্নামেন্ট। আর এই মাঠ থেকেই ৭৩-৭৪ সালের দিকে জাতীয় ফুটবল টীমে খেলেছেন কক্সবাজারের সুনীল কৃন্ষ দে, বর্তমানে খেলছেন সবুজ, অনুর্ধ-১৯ এ মাসুদ আলম, অনুর্ধ-২৩ এ বিজন বড়–য়া, বাংলাদেশ লীগ এ ১৯ জন সহ অনেক খেলোয়াড়। এত সম্ভাবনার পরও সরকারী-বেসরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে কক্সবাজার ক্রীড়া ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ছোট একটি স্টেডিয়ামে ঈদের নামাজ, সভা-সমাবেশ সহ অনেক কিছুই হচ্ছে। প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে এই স্টেডিয়ামের উপর। শহরের মধ্যে আর কোন মাঠও নেই। এ প্রেক্ষিতে গত দুই বছর ধরে স্টেডিয়ামের পাশেই পুরাতন জেলা কারগারকে ভেঙ্গে আউটার স্টেডিয়ামের জোর দাবী উঠেছিল ক্রীড়ামোদী কক্সবাজারবাসীর পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই পুরাতন কারাগার ভাঙ্গার জন্য দরপত্র আহবান করা হলেও একবছর ধরে সেটি আটকে আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন