বিশ্বের ক্ষুদ্রতম গাড়ি

Sahab Uddin:

দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বিস্ময়কর এ গাড়ির আয়তন এক ‘ন্যানোমিটার’। অর্থাৎ, এক মিটারের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ। এরপরও, একটিমাত্র ‘মলিকিউল’ দিয়ে তৈরি এই গাড়িটি কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী। চলেও আবার বিদ্যুৎশক্তিতে।

গ্রিক ভাষায় ‘ন্যানো’ কথাটির অর্থ হলো ‘বামন’। অথচ এই বামনগাড়ির কার্যপদ্ধতি অন্যান্য সাধারণ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চেয়ে কিছু কম নয়৷ জানালেন নেদারল্যান্ডসের গ্রনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেন ফেরিঙ্গা৷ সম্প্রতি ‘ব্রিটিশ সায়েন্টিফিক জার্নাল অফ নেচার’

ফেরিঙ্গার গবেষণা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷ আর সেখান থেকেই জানা গেছে যে, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই গাড়িটি ফোর-হুইল ড্রাইভ৷ শুধু তাই নয়, গাড়িটি চালাতে নাকি বাইরের শক্তির প্রয়োজন হয় না৷ অর্থাৎ, এটা সত্যিকার অর্থে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘অটোম্যাটিক’ গাড়ি৷

বিজ্ঞানী ফেরিঙ্গা বলেন, “১০টি হাইড্রোজেন পরমাণু পর পর রাখলে, তা এক ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের সমান হয়৷ যা খালি চোখে দেখা যায় না৷ অর্থাৎ, ন্যানো স্কেলে তৈরি যে কোনো জিনিসই খুব ছোট৷ তাই আমাদের চেষ্টা ছিল এমন একটি ‘মোটর’ তৈরি করা-যা ছোট হলেও, তার অংশগুলি হবে বেশি কার্যকর এবং সংবেদনশীল।”

এর জন্য চারটি ‘মলিকিউলার মোটর’কে গাড়ির চার চাকা হিসেবে ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা৷ যাতে করে, চারটি চাকাই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারে৷ হয়েছেও তাই৷ এই প্রথম, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ‘ফিড’ করা থাকলে, নিজে থেকেই চলতে পারছে গাড়িটি৷ ফেরিঙ্গা জানিয়েছেন, তামার একটি পাতের ওপর প্রায় ছয় ন্যানোমিটার দূরত্ব নিজে থেকেই পার করেছে এই বামনগাড়ি৷ নিখুঁত সরলরেখায় সামনের দিকে এগিয়ে গেছে৷

অবশ্য ওই পর্যন্তই৷ কারণ, গাড়িটি চলা শিখলেও, সামনের দিকে যাওয়ার সময় তার সবগুলি চাকা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে শেখেনি এখনো৷ এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা এ সমস্যা সমাধানেরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

তবে তারপরও, এই গবেষণাকে সফল হিসেবেই ধরা হচ্ছে৷ কারণ, ন্যানো প্রযুক্তিকে ঠিক এভাবেই কাজে লাগিয়ে সেলফোন, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক গাড়ি ইত্যাদি সবরকম ইলেক্ট্রনিক পণ্য দ্রুত চার্জ করা সম্ভব হতে পারে৷ এমনকি, তার জন্য পণ্যগুলির সামনে উপস্থিত থাকারও প্রয়োজন পড়বে না৷ পুরো ঘটনাটাই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে৷

বলাই বাহুল্য, আকারে অতি মাত্রায় ছোট হওয়ায় বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স, আলোকবিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি৷ গবেষক বেন ফেরিঙ্গা’র কথায়, “ক্ষুদ্র প্রযুক্তিই দেবে শক্তির বড় সমাধান।” সূত্র: ডয়চে ভেলে।