বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১১

বলিউডের বেস্ট বয়েজ

শাহাব উদ্দীন
হি-ম্যান থেকে গং-ম্যান, কর্পোরেট ইন্টালিজেন্ট থেকে শুরু করে রোডসাইড রোমিও-এ বছরের বলিউড হিরোরা তাদের সব রূপেই বক্স-অফিস মাত করেছেন। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছরের হিরো নির্ভর ছবিগুলো অনেক বেশি ব্যবসা করেছে। এর ফলে কদর বেড়ে গেছে কয়েকজন বলিউড হিরোর। আসছে বছরে তাদের কাটতি নির্দ্বিধায় থাকবে সবচেয়ে বেশি। বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সেই অভিনেতাদের নিয়েই একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্দো-এশিয়া নিউজ সার্ভিস।

সালমান খান
তার গত দুই বছরের পারফর্মেন্স বিশ্লেষণ করলে সালমানের নাম পরিববর্তন করে ‘হিট খান’ রাখলে অযৌক্তিক কিছু হবে। এ বছর সালমানের পেছনে লগ্নি করে প্রযোজকরা দেখেছেন সাক্ষাত লক্ষ্মীর মুখ। ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছে সালমানের দুটি ছবি। ‘রেডি’ ও ‘বডিগার্ড’। দুই ছবি থেকে বছর শেষে আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি রুপি। সামনের বছর গুলোতেও সাল্লু আশা করছেন এই সাফল্য ধরে রাখার জন্য। এ জন্যই এখন তিনি খুবই সতর্কতার সঙ্গে তার সামনের প্রজেক্ট বাছাই করছেন। কারণ, তার কাছে এখন টাকা বা অ্যাওয়ার্ড কোনো ব্যাপার না। এখন সালমানের কাছে মুখ্য হলো ‘সুপার ডুপার হিট’ ছবি।
আমির খান
এ বছর বলিউডে আমিরের খুব বেশি একটা হাঁকডাক শোনা না গেলেও নিরবিই কিন্তু তিনি জিতে নিয়েছেন এ বছরের ব্যবসা সফল অভিনেতাদের তালিকার দ্বিতীয় স্থানটি। আর্থিকভাবে তার বছরটি অতটা লক্ষ্মীময় না হলেও, সমালোচকদের দৃষ্টিতে আমিরের জন্য এ বছরটি ছিল অনেক মহত্বপূর্ণ। বছরের শুরুর দিকে ‘ধোবি ঘাট’ ছবিতে প্রশংসনীয় পারফর্মেন্স, এরপর ‘দিল্লি বেইলি’ দিয়ে প্রযোজক হিসেবে সাফল্য অর্জন এবং বছর শেষে কৃত্রিম উপায়ে সন্তান লাভ করে আলোচিত হন আমির। বলতে গেলে এবছর আলোচনা, সমালোচনা আর গুজবই আমিরকে শীর্ষ অভিনেতার তালিকায় উঠিয়ে এনেছে। তবে আমিরের ব্যপারে সমালোচকরা আগামী বছরই খোলাখুলিভাবে তাদের মন্তব্য দিতে চান। কারণ, ২০১২ সালে মুক্তি পাবে আমিরের বহুল প্রতীক্ষিত দু’টো ছবি, ‘তালাশ’ এবং ‘ধুম ৩’।
বীর কাপুর
পরদাদা আর দাদা বেঁচে থাকলে, আজ ঠিকই গর্ব করে বলতেন ‘যোগ্য’ কাপুর রনবীর। বছরে একটা ছবি দিয়েই পুরো বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ বছর ইমতিয়াজ আলি পরিচালিত ‘রকস্টার’ ছবিতেই দেখা গেছে রনবীরকে। ছবিটি আহামরি খুব বেশি আয় করতে না পারলেও বলিউড গুরুরা জানিয়েছেন, রনবীর না থাকলে এটুকুও আয় করতে পারতো না ‘রকস্টার’। ছবির দুর্বল চিত্রনাট্য এবং জটিল সম্পাদনার কারণে মিউজিক সুপার হিট হওয়া সত্ত্বেও, ছবিটি করতে পারেনি আশানোরুপ ব্যবসা। তবে নতুন বছর শুরু হতে না হতে ই ‘রকস্টার’-এ দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য অ্যাওয়ার্ডের ডাক চলে এসেছে রনবীরের ঘরে।
শাহরুখ খান
রোমান্স তার হাতের খেলনা, একটু মুচকি হাসি দিয়েই তিনি জয় করেন লাখ মানুষের হৃদয়। কিন্তু এবার আর ‘রোমান্স কিং’ হয়ে নয়। এবার তার আবির্ভাব অতিমানবের বেশে। রা.ওয়ান ছবিতে বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই সুপারহিরো তার ভক্তদের জন্য এ বছর যে প্রযুক্তিগত চমক নিয়ে এসেছিলেন, এমনটা এর আগে কোনো খানের দ্বারা সম্ভব হয়নি। তাই, দর্শকরাও সুপারহিরো শাহরুখ খানকে লুফে নিয়েছেন দারুণ উৎসাহ নিয়ে। তার ক্যারিশমা, চার্ম আর অপ্রতিরোধ্য মার্কেটিং স্ট্রাটেজির জোরেই বক্সঅফিস ভাঙা ব্যবসা করতে পেরেছে রা.ওয়ান। আর বছরের শেষ চমক ‘ডন ২’র ম্যাজিক তো এখনো বাকি আছেই।
অমিতাভ বচ্চন
অবসর? এটা কি জিনিস? ‘হট ফেভারিট’র তালিকা থেকেই নামার নাম নেই আর অবসর তো অনেক দূরের ব্যপার। আজকালের তাগড়া জোয়ান নায়করাই যেখানে একটা ছবি করেই ক্লান্ত হয়ে যায়, সেখানে অমিতাভ বলেন, ‘মাত্র তো শুরু’। তার এই তারণ্য আর প্রাণোচ্ছলতার কারণেই আজ এই অবস্থানে আছেন বিগ বি। ৬৯’এ এসেও ২৯ বছরের মাসালম্যানদের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ দিয়ে যাচ্ছেন। এ বছরও বলিউডের খান, কাপুর আর কুমারদের বিগ বি ‘বুড্ডা হোগা তেরা বাপ’ এবং ‘আরাক্ষণ’ নামের দুটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। যা সফলভাবেই তিনি জিতে নিয়েছেন। যার ফলে এই তালিকায় গর্বের সঙ্গে এখনো নিজের স্থান দখল করে রেখেছেন অমিতাভ বচ্চন।
ফারহান আখতার
এই তালিকায় একদমই নবীন ফারহান আখতার। কারণ তিনি অভ্যস্ত সেরা পরিচালকদের তালিকায় থেকে। সেরা অভিনেতাদের তালিকায় এই প্রথম অভিষেক ঘটলো ফারহানের। ‘জিন্দেগী না মিলেগি দোবার’য় প্রশংসনীয় পারফর্মেন্সের জন্যই ফারহানের এই বিশাল প্রমোশন। ‘দিল চাহতা হ্যায়’ এবং ‘ডন’র ছবি তৈরি করা পরিচালক নায়ক হিসেবও যে সমান সফল হতে পারেন, তার আদর্শ দৃষ্টান্ত ফারহান আখতার।
ঋত্বিক রোশন
প্রতি বছরের মতো এবারও ঋত্বিকের একটি ছবিই বক্সঅফিসে আঘাত হেনেছে। আর আঘাত হানা মাত্রই প্রত্যাশিত তাণ্ডব চালিয়েছে বক্সঅফিসে, যার প্রতিফলন স্বরূপ এই তালিকায় ঋত্বিকের চলে আসা। শুধু শীর্ষ অভিনেতাদের তালিকায় আসাই নয়, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র সাফল্য মুছে দিয়েছে আগের ছবি ‘কাইটস’র ব্যর্থতাও।
আর. মাধবন
দক্ষিণী এই তারকা কালেভাদ্রে একটি ছবি করেন। তবে, যেই ছবিই করেন তাতে নিজের মেধার ছাপ খুব ভালোভাবেই দেখা যায়। এ বছরও তেমন একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে আর. মাধবনের। নাম ‘তানু ওয়েডস মানু’। বিদেশ ফেরত এক ধনী ডাক্তারের চরিত্রে বেশ লেগেছে মাধবানকে। যা মানতে বাধ্য হয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচকরাও। এজন্যই তারা হাসিমুখে সেরা দশ বলিউড হিরোর একজন বানিয়ে দিয়েছেন আর. মাধবনকে।
অভয় দেওল
কমার্শিয়াল নায়কদের ভিড়ে এই একটিমাত্র মেথড অ্যাক্টর জায়গা করে নিতে পেরেছেন এ বছরের সেরা অভিনেতাদের তালিকায়। তবে কোনো ডার্ক আর্ট ফিল্ম দিয়ে নয়। কমার্শিয়াল ছবির বদৌলতেই তার এই তালিকায় স্থান করে নেয়া। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র ‘থ্রি মাসকেটারস’র তৃতীয় জন অভয়ও তার বন্ধুদের টানে চলে এসেছেন বছরের সেরা অভিনেতার তালিকার নবম স্থানে।
সাইফ আলি খান
‘ভার্সেটাইল’ বলতে হয়তো সাইফ আলি খানকেই বোঝায়। একেক বছর তার একেক রূপ কখনো ‘সালাম নামাস্ত’র লাভার বয় নিক, কখনো ‘ওমকারা’র দুর্ধর্ষ ল্যাংড়া তেয়াগি আবার কখনো ‘আরক্ষণ’র সচেতন শিক্ষক। সদ্য নবাব সাইফ সব রূপেই মুগ্ধ করেছেন ভক্তদের। এজন্যই ভক্তরাও নিরাশ করেননি তাকে। শেষ স্থানে হলেও সেরা দশ অভিনেতার তালিকায় ঠিকই রেখেছেন সাইফকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন