বছর আগে বিক্ষোভকারীরা যখন তিউনিসিয়ার রাস্তায় নেমেছিল, তখন খুব কম লোকই ভেবেছিল যে এ পথ এতো ব্যাপক বিস্তৃত গণতন্ত্রী আন্দোলন ছড়াবে দুনিয়া জুড়ে। কিন্তু এ আন্দোলনে যে ইন্টারনেট হ্যাকারদের কোনো ভূমিকা থাকবে, তা কি ভাবতে পেরেছিল কেউ?
এখন দেখা যাচ্ছে গণতন্ত্রী আন্দোলনের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা রক্ষায় অনলাইন জগতের বাসিন্দারা নিজেরাই সক্রিয় হয়ে উঠছে।
বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিতে কি-বোর্ড আগলে বসেছে দুনিয়ার হ্যাকাররা। ‘অ্যানোনিমাস’ ব্যানারে সমবেত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দক্ষ হ্যাকাররা। বিক্ষোভের সমর্থনে তিউনিসিয়া, মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটগুলোকে আক্রমণ করছে।
রীতিমত বিপর্যস্ত করে ফেলছে সরকারি তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো। যদিও অ্যানোনিমাসের অনেকেই বলছেন যে এসব তারা করছেন ‘স্রেফ আনন্দে’র জন্য।
এসবের মধ্য দিয়ে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে, গত এক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সক্রিয়তার মাত্রা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কম্পিউটারের কারিগরিতে দক্ষ এবং বিভিন্ন আদর্শে অনুপ্রাণিত হ্যাকাররা সব শাসকগোষ্ঠী, স্বৈরশাসন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেরাই অবস্থান নিচ্ছে।
বাংলাদেশে যদিও অধিপতি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হ্যাকিং-এর মতো ইন্টারনেট সক্রিয়তা ছড়ায়নি, কিন্তু ইন্টারনেটের স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যবহারকারীরাই সোচ্চার হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি সরকারের তরফে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কথা শুরু হয়েছে। একটি অনলাইন দৈনিক ও দুয়েকটি ব্লগও এর পক্ষে প্রচারণা চালাতে শুরু করলে দেখা গেছে, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ব্যবহারকারীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বলছেন, তারা ইন্টারনেটে ‘শৃংখলা বিধানে’ তারা কোনো ধরনের আইন চান না। কারণ, এমন আইন মাত্রই সরকারের হাতে প্রচুর ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ ক্ষমতা দেয়া।
এ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে খোদ ইন্টারনেটের জন্মস্থান আমেরিকাও। দেশটির পার্লামেন্ট বলছে, তারা ইন্টারনেটে ‘কপিরাইট লঙ্ঘন রোধে’ একটি আইন করতে চাচ্ছে। স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট বা সোপা নামে এ আইনটি এখন কংগ্রেসে আছে।
আমেরিকাসহ সারা দুনিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বলছেন, কপিরাইট লঙ্ঘন রোধের কথা বলা হলেও আইনটিতে এমনসব বিধান আছে যা ইন্টারনেট স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। তাছাড়া কপিরাইটভুক্ত জিনিসপাতি ব্যবহারও মুশকিল হয়ে পড়বে।
হ্যাকার গোষ্ঠী ‘অ্যানোনিমাস’ আমেরিকার সরকারকে হুমকি দিয়েছে যে, এ আইন পাস হলে তারা রীতিমত সাইবার যুদ্ধ শুরু করবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। যদিও মূলধারার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এতো বড় হুমকি দিচ্ছেন না। কিন্তু তারাও আইনত বৈধ নানা উপায়ে সরকারকে বিরত রাখতে চাপ প্রয়োগ করছেন।
এর বিপরীতে রাজনীতিকরাও সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, শুধু রাজনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার কাজেই নয়। বরং নিজের স্বার্থ আদায়ে নিজেই চাপ প্রয়োগে সক্ষম শক্তি হিসেবে দাড়িয়েছে ইন্টারনেট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন