সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১২

পর্নোগ্রাফির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা

মো: শাহাব উদ্দীন
সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর ও জরিমানা পাঁচ লাখ টাকার বিধান রেখে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অনুমোদিত আইনে পর্নোগ্রাফি বহন, বিনিময়, মুঠোফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা, বিক্রি ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধানসহ পর্নোগ্রাফি নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে বাদীর শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নতুন বছরের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনটি অনুমোদন
দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, পর্নোগ্রাফি সারাদেশে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। স্যাটেলাইট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ছড়াচ্ছে। পর্নোগ্রাফির কারণে নারী, পুরুষ ও যুবসমাজ হেয় হচ্ছে। তাই এ আইন করা হয়েছে। বৈঠকে বিশ্ববাজারে বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০১১’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, বৈঠকে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০১১ ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১- এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে ২০১২ সালের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের দেয়া ভাষণের খসড়া অনুমোদন করা হয়। প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্যাটেলাইট ও মোবাইল প্রযুক্তির কারণে সমাজে পর্নোগ্রাফি ব্যাধির মতো বিস্তার লাভ করছে। এতে যুবসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অপরাধ রোধে ও পর্নোগ্রাফি দমনে মন্ত্রিসভা এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১- এ দোষীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উভয় দণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে। প্রেস সচিব জানান, এ আইনে পর্নোগ্রাফি, উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ, বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এর বিচার করা যাবে। তবে কেউ মিথ্যা মামলা করলে তারও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া ২০১২ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের দেয়া ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর সম্পর্কে আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। অথচ বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। ১৮৮ মিটার জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে না পারায় কুতুবদিয়া বা অন্য কোথাও তা ভিড়িয়ে মাল খালাস করতে হয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মন্ত্রিসভা এ আইনটি অনুমোদন করেছে। প্রেস সচিব জানান, জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (পিসিআই) বঙ্গোপসাগরের নয়টি স্থানের ওপর সম্ভাব্যতা জরিপ চালিয়ে কক্সবাজারের সোনাদিয়াকে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে সুপারিশ করেছে। এর ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে এ আইনের খসড়া। এতে বলা হয়, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপিত হলে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরসহ ওই দেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের আমদানি-রপ্তানি সহজ ও সুবিধাজনক হবে। মিয়ানমার ও চীনের ইউনান প্রদেশের পণ্য পরিবহনেও এই বন্দর ভূমিকা রাখতে পারবে। ৯৬ জেটির এ বন্দর হলে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ৪০ কোটি মানুষের চাহিদা মিটবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছর থেকে এ বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর আগে আশির দশকে দেশী-বিদেশী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। আর ২০০৬ সালের ১২ই জুলাই প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনালকে (পিসিআই) এ কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। আজাদ জানান, চলতি বছর জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান যে ভাষণ দেবেন তার সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত ভাষণটি প্রেসিডেন্ট নিজে পাঠ করবেন এবং বিস্তারিত ভাষণটি সংসদে টেবিলে উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন এবং সার্ক কনভেনশন অন অপারেশন অন এনভায়রনমেন্ট অনুসমর্থনের প্রস্তাব ও চ্যাপ্টার অব এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া কো-অপারেশনে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার অংশগ্রহণ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন