রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১২

ফ্রিজ কথা বলবে, ওভেন তা শুনবে!

মো: শাহাব উদ্দিন
স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সেস’। এর মানে হলো ঘরে ব্যবহারের জিনিসপত্র যদি বুদ্ধিমান হয় তাহলে জীবনটা আরেকটু সহজ হয়ে যায়৷ ব্যাপারটা আলোচিত হচ্ছে বহুদিন ধরেই৷ এবার বাস্তবায়নের পালা৷
ধরুন, আপনি অফিসে৷ এমন সময় কেউ একজন ফোন করে রাতে আপনার অতিথি হতে চাইলো৷ কিন্তু হয়তো আপনি কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে অতিথিকে আপ্যায়ন করার মতো যথেষ্ট সময় নেই৷ এই পরিস্থিতিতে আপনাকে সহায়তা করতে
এগিয়ে আসতে পারে ‘স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সেস’। যেমন বুদ্ধিমান রেফ্রিজারেটর, ওভেন, রোবোটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি৷ তাদের সাহায্য পেতে আপনাকে শুধু আপনার স্মার্টফোন দিয়ে ওইসব বুদ্ধিমান গ্যাজেটগুলোকে কাজের নির্দেশ দিলেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে৷ নিজে ঘরে না থেকেও রান্না তৈরি হয়ে যাবে৷ আর আপনার অতিথিও আপ্যায়িত হয়ে যাবে৷
 এমন ফ্যান্টাসির কথা এতোদিন শুধু শোনা যাচ্ছিল৷ কিন্তু এবার এর একটা বাস্তব রূপ দেখা গেছে৷ আমেরিকার লাস ভেগাসে সম্প্রতি শেষ হয়ে যাওয়া কনজিউমার ইলেকট্রনিক শো’তে এ ধরনের গ্যাজেট দেখা গেছে৷
 
‘স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সস’ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি৷ তারা মেলায় একটা রেফ্রিজারেটর নিয়ে এসেছিল যাতে সংযুক্ত ছিল একটা টাচস্ক্রিন৷ ফ্রিজের ভেতরে কী কী আছে এবং কোন জায়গায়, তা লেখা রয়েছে ওই স্ক্রিনে৷ এছাড়া ফ্রিজে থাকা দুধের মেয়াদ কতদিন আছে সেটাও স্ক্রিনেই দেখতে পাওয়া যায়৷
এই ফ্রিজকে বাইরে থেকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ যেমন আপনি বাজার করার সময় ফোনের মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন ফ্রিজে কী কী জিনিস আছে, আর কী কী কিনতে হবে৷ আবার আপনি যদি ফ্রিজকে জানিয়ে দেন আপনি কী রান্না করতে চান তাহলে ফ্রিজ সেটা জানিয়ে দেবে ওভেনকে৷ আর ওভেন সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে দেবে৷
এর মানে হচ্ছে, ওইসব গ্যাজেটকে আপনার কথা শোনাতে হবে৷ এবং গ্যাজেটগুলোকেও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে হবে৷ এসব নিশ্চিত করতে গ্যাজেটগুলোর মধ্যে ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি প্রয়োজন৷ এলজি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে৷ একই সঙ্গে ঘরের কাজে সহায়ক এসব যন্ত্রপাতিগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করতেও গবেষণা করছে এলজি৷
 দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি কোম্পানি স্যামসাং’ও বুদ্ধিমান ফ্রিজ নিয়ে কাজ করছে৷ তাদের উদ্ভাবিত ফ্রিজকে আপনি শুধু বলবেন, আপনার এটা এটা প্রয়োজন৷ ব্যস, ফ্রিজই সব বাজার করে আনবে! ব্যাপারটা এরকম যে, ফ্রিজে যে টাচস্ক্রিনটা রয়েছে সেটা ব্যবহার করে আপনি শুধু ফ্রিজকে জানিয়ে দেবেন আপনার এক কেজি আপেল আর এক হালি ডিম দরকার৷ সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজ সেটা এসএমএস বা সংক্ষিপ্ত বার্তার  মাধ্যমে জানিয়ে দেবে দোকানিকে৷ দোকানি তখন সেগুলো বাসায় পৌঁছে দেবে৷ অবশ্য এজন্য কতগুলো নির্দিষ্ট দোকানের সঙ্গে ফ্রিজের সংযোগ থাকতে হবে৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই ব্যবস্থা চালুও হয়ে গেছে৷
ফ্রিজের পর এবার বুদ্ধিমান ভ্যাকুয়াম ক্লিনার খবর দেয়া যাক৷ এলজি’র তৈরি একটা রোবোটিক ক্লিনারে রয়েছে তিনটি ক্যামেরা৷ আপনার কাছে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে আপনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারবেন৷ আপনি দেখতে পারবেন ঘরের কোথায় ময়লা জমে আছে৷ সে অনুযায়ী ক্লিনারকে নির্দেশ দিতে পারবেন৷
এই যে এতসব স্মার্ট গ্যাজেট এগুলো আসলে ‘কানেক্টেড হোম’ ধারণার একটা অংশ৷ বাইরে থেকেও ঘরের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারাই এর লক্ষ্য৷ এখন হয়তো খুবই সীমিত পরিসরে এর ব্যবহার হচ্ছে৷ কেননা এগুলোর দাম এখনো সাধারণের হাতের নাগালে নয়৷ তবে এলজি আমেরিকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জন টেলর আশা করছেন, খুব শিগগিরি এগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে৷
ঘরের জিনিসপত্র প্রস্তুতকারকদের প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাসোসিয়শন অফ হোম অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ম্যাসনার বলেন, “গত বছরের মেলায় একটা বড় প্রশ্ন ছিল, কবে নাগাদ স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সগুলো বাজারে আসবে৷ গত এক বছরে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে৷”
সংশ্লিষ্টদের এসব কথায় মনে হচ্ছে, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যখন সাধারণ মানুষও এসব বুদ্ধিমান যন্ত্রগুলোর মালিক হতে পারবে৷ স্বাদ নিতে পারবে ‘স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সেস’র ‘স্মার্ট’ জীবনযাপনের। সূত্র: ওয়েবসাইট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন