মো: শাহাব উদ্দিন
আপনার শান্ত-সুবোধ সন্তানটিকে নিয়ে সব ভবিষ্যৎ স্বপ্ন তছনছ করে দিতে পারে মোবাইল ফোন। আজকাল মোবাইল ফোন একটি মামুলি ব্যাপার। এখন আর মানুষ শুধু কথা বলার জন্য মোবাইল ব্যবহার করতে চায় না। মোবাইলে থাকা চাই ক্যামেরা, অডিও, ভিডিও, ইন্টারনেট। দেশের প্রথম শ্রেণীর স্কুলগুলোর বাচ্চাদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই তথাকথিত ব্যস্ত হাইফাই সোসাইটির অভিভাবকগণ মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছেন। অবশ্য পরবর্তীতে তারা ভীষণ পস্তাচ্ছেনও বটে। এ সকল শিশু শিক্ষার্থীদের মায়েরা ‘রাজকন্যা-পঙ্খীরাজ ঘোড়া’র গল্প বলে সন্তানকে ঘুম পাড়াতে বিরক্ত বোধ করেন।
তাই বাচ্চাকে কিনে দেন ভিডিও ক্যামেরা সমৃদ্ধ একটা মোবাইল ফোন, যেন মোবাইলে ‘টম এণ্ড জেরী’ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায় তার আদরের সন্তান। আর এ সুবাদে ইন্টারনেট সার্চ করে রাত পার করে দেয় শিশুটি। এক সময় এই শিশু-কিশোরা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের পর্নোগ্রাফির কবলে পড়ে হারায় তাদের শৈশব। যে ছাত্র বা ছাত্রীটি তার কৈশোরের স্বাদই পায়নি তাকে পর্নোগ্রাফির ফাঁদে ফেলে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয় জীবন থেকে… পর্নোগ্রাফি, ইন্টারনেট ও ছাত্রদের প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পর্কে মনোরোগবিদ
ডা. গৌরী রাণী দেবনাথ বলেন, “টিনেজ মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে। শুরুতে মেয়েরা যখন মোবাইল ফোনে কোন অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলে তখন তাদের আবেগ ও কনসেনট্রেশনে বড় একটা ধাক্কা লাগে। অপরিচিত ব্যক্তির প্রতি একটা রহস্য তৈরি হয়। বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষদের কণ্ঠ-বাচনভঙ্গি সবই তাদেরকে বিভ্রান্ত করে। এতে তাদের মনোযোগ, অনুভূতি সবকিছু তছনছ হয়ে পড়ে। তরুণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পর্ক হলে যতটা খারাপ না হয়, অজানা অচেনা পুরুষদের সম্পর্কই তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করে। তখন এরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে যৌন সম্পর্কও গড়ে তোলে। ছেলেরাও একইভাবে মিসগাইড হয়। মনোযোগে ঘাটতি, নানা মানসিক সঙ্কটে পড়ে যায়। অপরিণত বয়সেই যৌন অস্থিরতা দেখা দেয়। এ কারণে তার অবদমিত মনের কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এভাবে তারা নিজেদের জগৎ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। এভাবে অপরাধের দিকেও ঝুঁকে পড়ে তারা। এক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব বেশি। মা-বাবার অবহেলার কারণে এসব ঘটে। আর টিনেজদের এভাবে প্রলুব্ধ করে যারা ফোন করে তারাও খুব ভয়ঙ্কর।”
অনুসন্ধানেও দেখা গেছে তারা এমন মোবাইল সেটই ব্যবহার করে যা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করার মতো সাম্প্রতিক প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে। এখন সস্তায়ই এসব সেট পাওয়া যাচ্ছে। এ সব মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পর্নো ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইটে ঢুকেই বেসামাল হয়ে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা।
নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ে এমন ছাত্রদের মোবাইলের আসলে কোন প্রয়োজন নেই। অভিভাবকদের কোন তদারক না থাকার কারণেই ছাত্ররা বেপরোয়াভাবে মোবাইল ও পর্নোগ্রাফির ফাঁদে পড়ছে। পিতা-মাতা এখন শিশু-কিশোরদের গিফট দিচ্ছে দামি মোবাইল সেট। এছাড়া, বাসায় ডিশ ও ইন্টারনেটের সংযোগ থাকার কারণে যাবতীয় নোংরামি রপ্ত করছে আমাদের শিশু-কিশোররা।
পর্নোগ্রাফির নানা ভিডিও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে তারা ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন নেটওয়ার্কে। রাজধানীর অভিজাত এলাকার স্কুলের কিছু ছাত্র এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে অনৈতিক যৌন সম্পর্কে। আরও এক ধাপ এগিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্ররা মেয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের চিত্র মোবাইল ভিডিওতে ধারণ করে এক বন্ধু থেকে অন্য বন্ধুর মোবাইলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের বয়স ১৩-১৪ বছরও পেরোয়নি। এছাড়া, এসব অল্প বয়সী ছাত্রছাত্রীরা একটু ঝগড়া বিবাদ হলে মোবাইল ফোনে দলবল এনে বড় ধরনের সংঘাতের সূত্রপাত করছে। এতে নানা অঘটন ঘটছে। মোবাইলের কারণে ইয়াবার মতো মাদকদ্রব্যও এখন শিশু-কিশোরদের নাগালের মধ্যে। গড়ে তুলছে মাদকদ্রব্যের নেটওয়ার্ক।
মোটকথা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের শিশু-কিশোরদের স্বপ্নগুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে পারে। অভিভাবকগণ এখনই সচেতন না হলে সন্তানকে নিয়ে সারাজীবন পস্তাতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন